বিশ্বের দ্রুততম কম্পিউটার মস্তিষ্ক || Page-94
বিশ্বের দ্রুততম কম্পিউটার মস্তিষ্ক
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে একটি পিসি বা পার্সোনাল কমপিউটারের মালিক হওয়া অনেকের কাছেই এখনাে লােভনীয় স্বপ্ন। কিন্তু সত্যিই কি আপনি কমপিউটার-বিহীন ? ভগবান প্রয়ােজনীয় সমস্ত কাজ-কর্ম করার জন্য আমাদের প্রত্যেককেই দিয়েছেন এক একটি পার্সোনাল সুপার কমপিউটার – মস্তিষ্ক, ব্রেন। ।
বর্তমান বিশ্বে নিউরােসায়েন্সের গবেষণায় যত অগ্রগতি হচ্ছে, ততই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করছেন মস্তিষ্কের অদ্ভুত জটিলতা ও কার্যক্ষমতা। যদিও এক অর্থে যান্ত্রিক কমপিউটার ব্রেন কমপিউটারের থেকে উন্নত; যেমন ছােট একটি ক্যাকুলেটর মস্তিষ্কের চেয়ে অনেক দ্রুত, বড় হিসাব নিখুঁতভাবে করে ফেলতে পারে। কিন্তু তার ক্ষমতা ওই পর্যন্তই।
একজন মানুষের মস্তিষ্ক লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি, বস্তুর ছবি সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারে, কোটি কোটি তথ্য সঞ্চিত রাখতে পারে, জনবহুল রাস্তায় সঠিকভাবে গাড়ী চালাতে পারে, জটিল যন্ত্রের নকশা উদভাবন করতে পারে। আইনস্টাইন তার মস্তিষ্কের সাহায্যেই আবিষ্কার করেছিলেন E=mc2 সূত্র।
কমপিউটারের হিসাবে, মানব মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কেমন? কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত কমপিউটার ডিপ ব্লু-কে 1997-এ দাবা প্রতিযােগিতায় হারিয়ে দেন রাশিয়ার কাসপারভ। 1999-এ তৈরী পৃথিবীর যে দ্রুততম কমপিউটার প্রসেসর চিপ বাজারে আসে,সেটি 700 MHz . (মেগাহর্জ) পেন্টিয়াম, এবং সেটার তথ্যবহন ক্ষমতা 4200 MIPS (MIPS=Million Instruction per second – অর্থাৎ সেকেন্ডে 10 লক্ষ ইনস্ট্রাকশান)।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মানুষের মস্তিষ্কে 100 বিলিয়ন, অর্থাৎ দশ হাজার কোটি নিউরােন বা স্নায়ু রয়েছে, এবং ঐসব নিউরােনের প্রায় 100 ট্রিলিয়ন বা 10 লক্ষ কোটি সাইনাস রয়েছে। কেবল চোখের রেটিনা থেকে মস্তিষ্কে আসে প্রায় 10 লক্ষ নিউরােনের ফাইবার-কেবল, এবং যখন চোখ কোন কিছু দেখে তখন 10 লক্ষ পয়েন্টের ইমেজ সেকেন্ডের 10 ভাগের 1 ভাগ সময়ে মস্তিষ্কে যায়, অর্থাৎ সেকেন্ডে 1 কোটি পয়েন্টের ইমেজ রেটিনা প্রসেস করে মস্তিষ্কে পাঠায়।
মানুষের রেটিনার আয়তন 1 বর্গ সেঃমিঃ এবং মাত্র 0.5 মিলিমিটার পুরু। মানুষের মস্তিষ্ক প্রায় 1500 ঘন সে.মি., এবং রেটিনার থেকে 100,000 গুণ বড়। অতএব সরল গণিত অনুসারে, একজন নিউরােসায়েন্টিস্ট জানাচ্ছেন, সাধারণ মস্তিষ্কের প্রসেসিং পাওয়ার হচ্ছে প্রায় 100 মিলিয়ন বা 10 কোটি MIPS, যা সুপার কমপিউটারের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
কিন্তু এটুকুই শেষ নয়; সেকেন্ডে যে কোটি কোটি ইনস্ট্রাকশান ব্রেনে প্রবেশ করছে, সেগুলিকে প্রসেস করা, গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলিকে মস্তিষ্কের হার্ডডিস্ক স্থায়ী মেমারিতে সঞ্চয় করার যে জটিল প্রক্রিয়া রয়েছে, তা বিস্ময়কর ও অনুনুকরণীয়।
মস্তিষ্কের সঙ্গে এ বিষয়ে রয়েছে মনের রহস্যময় সংযােগ, সম্পর্ক। পক্ষান্তরে 1998 -এ তৈরী হাজার হাজার দ্রুততম মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে তৈরী, কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত সবচেয়ে শক্তিশালী এক্সপিরিমেন্টাল সুপার কমপিউটারের ক্ষমতা পৌছায় কেবল কয়েক মিলিয়ন MIPS , যেখানে মানব মস্তিষ্ক 100 মিলিয়ন এম.আই পি এস।।
মস্তিষ্কের 10 হাজার কোটি নিউরােনের মধ্যে দিয়ে যে ইলেকট্রোকেমিক্যাল ওয়েভ চলে, তার জন্য যে বিদ্যুৎ প্রয়ােজন, তা 120 ভােল্টের একটি অতিকায় ব্যাটারী থেকে উৎপন্ন বিদ্যুতের সমান।।
মস্তিষ্কের স্মৃতিভান্ডারে তথ্য ধারণ ক্ষমতা প্রায় 500-1000 টেরাবাইট বলে বিজ্ঞানী জানাচ্ছেন (1000000 MB=1000 GB, 1000 GB=1000 TB-Terabytes)*।।
মস্তিষ্কের সব নিউরাল সেল মানুষের ব্যবহার করার প্রয়ােজন হয় না বলে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন – কেবল 10%-20% স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ব্যবহৃত হয়। এই তথ্যও বিব্রত করে বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীদের : ব্যবহার করতে করতে যদি মস্তিষ্ক জটিল ও উন্নত হয়ে থাকে, তাহলে কেন মস্তিষ্কের এক বিপুল অংশ রয়েছে অব্যবহৃত? অব্যবহৃত অংশটিও কেন একইরকম ভাবে জটিল ও উন্নত?
দ্বিতীয়তঃ, জীবজগতে দেখা যায় যে ওজনের সঙ্গেও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার বিশেষ সম্পর্ক নেই; অর্থাৎ ওজন বেশি হলেই যে মস্তিষ্ক অত্যন্ত উন্নত হবে, এমন কোন কথা নেই। নীচের তথ্য লক্ষ্য করুনঃ
. | প্রজাতি | ওজন (গ্রাম) | |
---|---|---|---|
1 | স্পার্ম তিমি | ৭৮০০ | |
2 | ফিন তিমি | ৬৯৩০ | |
3 | হাতি | ৬০০০ | |
4 | ডলফিন | ১৫০০ | |
5 | মানুষ | ১৪০০ | |
6 | উট | ৭৬২ | |
7 | জিরাফ | ৬৮০ | |
8 | জলহস্তী | ৫৮২ | |
9 | মেরু ভালুক | ৪৯৮ | |
10 | গরু | ৪২৫-৪৫৮ | |
11 | শিম্পাঞ্জি | ৪২০ | |
12 | বাঘ | ২৬৩ | |
13 | কুকুর | ৭২ | |
14 | হাঙর | ৩২ | |
15 | চড়ুই পাখি | ১.০ |
Comments
Post a Comment