বিজ্ঞানের যুগে বিশ্বসভ্যতা ||পরিবেশের মৌল তিনটি উপাদান || বিশুদ্ধতা স্বপ্নময় অতীত PAGE-9
পরিবেশের মৌল তিনটি উপাদান:-বিশুদ্ধতা স্বপ্নময় অতীত
জীবনধারণের তিনটি অপরিহার্য উপাদান :- বায়ু, জল ও খাদ্য। অবাধ শিল্পায়নের মাধ্যমে প্রকৃতির সম্পদ শােষণের ফলশ্রুতি হল, এই তিনটি মৌল উপাদানের বিশুদ্ধতা অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
বায়ুঃ- বিশ্বে শিল্প-কারখানা থেকে বছরে ৬০০ কোটি টন বাড়তি Co2 পরিবেশে মিশছে। জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচী ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের সমীক্ষা অনুযায়ী পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ শহরবাসী দুষিত শ্বাস নেয়। ভারতের বড় শহরগুলিতে এই দূষণ প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে ১০টি সিগারেট খাওয়ার সমান।
কেবল পশ্চিমবঙ্গের শুধু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি চালাতে প্রতিদিন কয়লার প্রয়ােজন হয় দুই হাজার টন। ভারতে ৩ লক্ষ টন, পৃথিবীর কথা তাে সহজেই অনুমেয়। এর সঙ্গে রয়েছে কোটি কোটি গাড়ি,বিমান চালানাের জন্য প্রতিদিন খনি গর্ভ থেকে কোটি কোটি গ্যালন তেল তােলা ও জ্বালানাে।
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বাতাসে প্রতিবছর যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিশেছে, শুধু কলকারখানা ও গাড়ী থেকে আসছে ৭৫%। আরাে নানা রকম গ্যাস বাতাসে মিশছে, যেমন- ওজোন, ক্লোরােফ্লুরাে কার্বন,নাইট্রোজেনের নানা অক্সাইড ইত্যাদি—এদের একত্রে বলা হয় গ্রীন হাউস গ্যাস। এদের সম্মিলিত সংক্রমণে বিধ্বস্ত বাতাস।
একজন মানুষের প্রতিদিন ১৬ কেজি অক্সিজেন প্রয়ােজন। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নির্বাচিত পাঠসংকলন পাঠ্যবইয়ে পরিবেশ দূষণ’ শীর্ষক প্রবন্ধের তথ্য অনুসারে একটি মােটরগাড়ী এক হাজার কিলােমিটার গেলে যে অক্সিজেন পােড়ায়, তাতে একজন মানুষ একবছর শ্বাস নিতে পারে।
এক টন কয়লা পােড়ালে সম পরিমাণ অক্সিজেন লাগে।। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে পােড়ানাে হয় হাজার হাজার টন কয়লা। একটি বিমান কোলকাতা থেকে বম্বে যেতে ৭০/৮০ টন অক্সিজেন খরচ করে।
প্রতিদিন হাজার হাজার বিমান উড়ছে আকাশে। বাতাসে মিশছে শত শত টন হাইড্রোকার্বন। স্পেস এজ, আমরা মহাকাশ স্বপ্নে বিভাের। কিন্তু মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার রকেট এক একটি আস্ত রাক্ষস। একটি কলম্বিয়ার মতাে রকেট উৎক্ষিপ্ত হলে প্রথম ৮ মিনিটে পুড়ে যায় চার হাজার টন জ্বালানী; প্রতিবছর শত শত রকেট উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে।
এক হেক্টর আয়তনের ঘন অরণ্য অঞ্চলে বছরে চার টন কার্বন-ডাইঅক্সাইড শােষিত হয়,২টন বিশুদ্ধ অক্সিজেন বাতাসে যুক্ত হয়। পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে তিন একর বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে সভ্যতার আক্রমণে।
প্রতিদিন কেবল ভারতবাসীর প্রয়ােজন প্রায় দেড় কোটি টন অক্সিজেন, বছরে প্রয়ােজন সাড়ে পাঁচশাে কোটি টন। ভারতে যা অক্সিজেন উৎপন্ন হয়, তা প্রয়ােজনের তুলনায় অনেক কম। এখন এই ঘাটতি পূরণ হচ্ছে অতীতের ভান্ডার থেকে। কিন্তু এই ভান্ডার নিঃশেষিত হতে কতদিন?
সারা বিশ্বেই , বিশেষত শহরাঞ্চলে কম অক্সিজেনযুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে হয় মানুষকে। এজন্য কমছে জীবনীশক্তি ও দেহের স্বাস্থ্য-বল, বাড়ছে রােগ। প্রায় প্রতিটি মানুষ অসুস্থ–সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ ক্রমেই বিরল হচ্ছে।
নবজীবনীশক্তিতে ভরে দিতে বিশ্বের শহরে শহরে খােলা হচ্ছে অক্সিজেন চেম্বার। আধঘন্টা বিশুদ্ধ অক্সিজেনপূর্ণ বায়ু-ভৰ্ত্তি চেম্বারে বসে থাকুন। বিল মিটিয়ে চলে আসুন। এইভাবে বিত্তবান মানুষেরা তাদের ফুসফুস সঞ্জীবিত করছে, কিন্তু বসুন্ধরার বাকি জীবজগতের কি হবে?
আর পৃথিবীর মােট ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানী তেল,কয়লা, গ্যাস সম্পূর্ণ পােপাড়ানাের পর বসুন্ধরার অবস্থা কেমন দাঁড়াবে? অনুমান করা কঠিন কিছু নয়।
প্রতিবছর ১০ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটছে গাড়ীর সংখ্যার। অব্যাহত শিল্পবৃদ্ধির হার। শুধু কোলকাতাতে গড়ে ৬ লক্ষ গাড়ী চলে রাস্তায়। ৭০% দূষণ সৃষ্টি হয় গাড়ী থেকে। এদের কল্যাণে কল্লোলিনী’ কোলকাতা, সিটি অফ জয় এখন পৃথিবীর তৃতীয় দূষিততম শহর।
Comments
Post a Comment