ইকো সিস্টেমঃ পরিবেশ বাস্তুতন্ত্র। কল্পবিজ্ঞান যখন বিজ্ঞান || Page-67
ইকো সিস্টেমঃ পরিবেশ বাস্তুতন্ত্র।
জীববিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ প্রজাতির জীব-বৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ । বিজ্ঞানী ট্যানসেল বাস্তু নীতির সংজ্ঞা দিয়ে সুন্দরভাবে এটি বিশ্লেষণ করেছেন। একটি জালের দু-একটি সূতাে খুলে ফেললে যেমন পুরাে জালের সূতাে ক্রমশ আলগা হয়ে পড়ে, তেমনি জীব প্রজাতির আন্তঃ-সম্পর্কিত তন্ত্র (Interconnected fabric) সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে পুরাে জীববৈচিত্র্যে তা সংক্রামিত হবে, বিপন্ন হবে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির অস্তিত্ব।
দৃষ্টান্ত-১: মৌমাছিরা পরাগ মিলন করে, সংগ্রহ করে ফুলের মধু। ফুলের অস্তিত্ব না থাকলে মৌমাছির অস্তিত্ব অসম্ভব, আবার মৌমাছি না থাকলে ফুলের পরাগমিলন এবং বহু উদ্ভিদ প্রজাতির বংশধারা-রক্ষা অসম্ভব।
দৃষ্টান্ত-২ঃ আন্দামানের এক দ্বীপ-বনে সরকার থেকে হরিণ ছাড়া হয়। কয়েক বছর পর হরিণের এতই সংখ্যা বৃদ্ধি হতে থাকে যে ঐ ছােট দ্বীপ-বনের সীমিত খাদ্য-ভান্ডারে টান পড়তে থাকে, বিপন্ন হয়ে পড়ে হরিণদের অস্তিত্ব। তখন সেখানে সরকার থেকে বেশ কিছু বাঘ-বাঘিনী নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়, তারা-নিষ্ঠা সহকারে হরিণদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব পালন করতে থাকে, রক্ষা হয় উভয়ের অস্তিত্ব। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এক প্রজাতির আগে উদ্ভব হওয়া, অন্যটির পরে — সম্ভব হতাে কি?
দৃষ্টান্ত-৩ঃ বংশধারা রক্ষার প্রবেগ রয়েছে প্রত্যেক প্রজাতির । এটাই প্রত্যাশিত যে উন্নত প্রজাতির জীব বেশি সংখ্যায় বংশধারা সৃষ্টি করবে। কিন্তু প্রকৃতির ব্যবস্থায় দেখা যাচ্ছে, জীব যত অনুন্নত, তাদের অপত্য-উৎপাদন-হার তত বেশি। জীবাণুরা কয়েক ঘন্টায় দুটি থেকে কোটি কোটি হতে পারে, মশা, ব্যাঙ এক সঙ্গে লক্ষ লক্ষ সন্তান-সন্ততি তৈরী করে। স্যামন মাছ এক সঙ্গে তিন কোটি ডিম পাড়ে, ঝিনুক ১২ কোটি, পক্ষান্তরে তিমি, হাতি, বাঘ সিংহ বছরে একটি বা কয়েকটি মাত্র শাবক উৎপন্ন করে। এই ব্যবস্থা বাস্তুতন্ত্রের স্বার্থে - খাদ্যশৃঙ্খল (Food chain) বা খাদ্য পিরামিডের ভিত্তিতে বজায় থাকে বিভিন্ন জীবপ্রজাতির অস্তিত্ব। এই ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ সুপরিকল্পনা ; প্রত্যেক জীব-প্রজাতি খেয়াল খুশিমত নিজেদের বংশধারা সৃষ্টির ব্যবস্থা করলে পৃথিবীর জৈব-বৈচিত্র্যে নিয়ত বিরাজ করত কেবল বিশৃঙ্খলা আর বিনাশ।।
এইভাবে, ইকোসিস্টেমে প্রত্যেক জীবেরই এক নির্দিষ্ট অবস্থান ও ভূমিকা রয়েছে, ইকোলজির ভাষায় যাকে বলা হয় “ইকোলজিক্যাল নিসে’ (Niche)। রয়েছে আন্তঃক্রিয়া (Interaction)।
প্রজাতিগুলি যুগপৎ বা একসঙ্গে বিদ্যমান না থাকলে ইকো সিস্টেমের কোন অর্থ থাকেনা, আর ইকোসিস্টেম ছাড়া বিপর্যস্ত হতে বাধ্য জীবজগতের অস্তিত্ব।।
Comments
Post a Comment