আমি’ কে ? কিছু রাসায়নিক পদার্থের থলি ? জীবন হয় অজড় || লুই পাস্তুর || ডারউইন মতবাদ ||PAGE-56
আমি’ কে ? কিছু রাসায়নিক পদার্থের থলি ?
PAGE-56
'
“আপনার দাম কয়েক বছর আগে যা ছিল , তার চেয়ে এখন সাড়ে পাঁচ গুণ বেশী। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লােহা এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের মূল্য এই শতকের (বিংশ-শতকের ) গােড়ার দিকে ছিল ২০ টাকা; এখন সেটা ইলিনয়েস কলেজ অক্ মেডিসিন-এর অ্যানাটমি বিভাগের প্রফেসর হ্যারি মেনসনের মত অনুসারে ১১০ টাকা।”—
অ্যাসােসিয়েটেড প্রেস থেকে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে।
ঐ নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, “মানুষের দেহের সমস্ত পদার্থের বেশীর ভাগটাই হচ্ছে জল। ১২০ পাউন্ড ওজনের একজন ব্যক্তির দেহে প্রায় ১০ পাউন্ড ক্যালসিয়াম, ৩ পাউন্ড ফসফেট, ১৮ আউন্স পটাশিয়াম, ১২ আউন্সের কিছু বেশী সালফার ও সম পরিমাণ সােডিয়াম, দুই আউন্সের কিছু বেশী ম্যাগনেসিয়াম এবং লােহা, তামা এবং আয়ােডিন আছে -(বাকী অংশের প্রায় সবটাই জল)।
ক্যালসিয়াম, ফসফেট, পটাসিয়াম, সালফার কিছু আয়ােডিন —শুনে কি মনে হচ্ছে। এগুলিই আপনি? এইগুলি আমাদের স্বরূপের উপাদান?
অধিকাংশ মানুষেরই এক অন্তর্নিহিত সংজ্ঞা বা বােধ রয়েছে যে তাদের জীবন, তাদের আমিত্ব এই রকম তুচ্ছ, স্থূল ভৌত পদার্থ-কেন্দ্রিক নয়; তারা কখনােই নিজেদেরকে কিছু রাসায়নিক পদার্থের সমাহার মনে করেন না। কিন্তু আমরা যদি প্রচলিত মতবাদগুলি মেনে নিই, তাহলে ঐটিই হচ্ছে বাস্তব চিত্র। কিন্তু এই চিত্রটি আদৌ কি বাস্তব, না কল্পনা-নির্ভর।
শাশ্বত সত্য ::জীবন অজড় (Non-matter)।
পরীক্ষাগারে কোন প্রাণীর অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু হলে তৎক্ষণাৎ, এমনকি দুইতিন সেকেন্ডের মধ্যেও কৃত্রিম শ্বাসক্রিয়া বা আর্টিফিশিয়াল রেসপিরেশানের মাধ্যমে যদি বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়, এমনকি কৃত্রিমভাবে রক্ত সংবহন ব্যবস্থাও চালু করা হয়, দেহে আবারও প্রাণ ফিরে আসবে কি? দেহের কোষগুলি তাে তখনও পূর্ণ সজীব---- কেন মানুষের শরীরে যখন হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনের অপারেশন করা হয়, তখন যদি কিছুক্ষণের জন্য কৃত্রিম রক্তসংবহন যন্ত্রটি বন্ধ রাখা হয়, রােগীর মৃত্যু হবে; যান্ত্রিক ব্যবস্থায় যদি মুহূর্তের মধ্যে সেকেন্ডের ভগ্নাংশেও যদি রক্তসংবহন চালু করা হয়, ব্যক্তির দেহটি পুনরায় জীবন্ত হয়ে উঠবে কি ?
এর কারণ হচ্ছে জীবন অজড তাই মানুষের মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড এমনকি সেকেন্ডে ভগ্নাংশের কম সময়ে আমরা যাই কিছু করি না কেন যেভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করি না কেন তাকে বাচাঁনো যাবে না অর্থাৎ জীবন চিনময় তাকে ধরে রাখা অসম্ভব ব্যাপার।
লুই পাস্তুর :: ‘The Greatest biologist of all time
লুই পাস্তুর সম্বন্ধে বলা হয় যে তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জীব বিজ্ঞানী এবং তিনি, "Contributed more to the saving of human lives than any other man', অর্থাৎ তিনি অন্য যে কোন বিজ্ঞানীর চেয়ে বেশি সংখ্যায় মানুষের জীবন রক্ষায় অবদান রেখেছেন। তিনি জলাতঙ্ক, ডিপথেরিয়া ও অ্যানথ্রাক্স রােগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন। সংক্রামক রােগগুলি জীবাণু থেকেই সৃষ্টি হয় – তিনিই এই তত্ত্বের প্রথম প্রবক্তা। তাঁর জীবৎকালে (১৮২২-১৮) ডারউইনবাদ জন্ম নেয়, এবং পাস্তুর বিরােধিতা করেন।
ডারউইনবাদের-
“The more I study nature, the more I stand amazed at the work of the Creator ”
- Louis Pasteur
ল অব বায়ােজেনেসিস্—বা জৈব উদ্ভবের নিয়ম অনুসারে জীবন উদ্ভূত হয় জীবন থেকেই, কখনাে জড় পদার্থ থেকে জীবনের উদ্ভব হয় না;তাঁর এই সুদৃঢ় সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকে প্রবল বিরােধিতার সম্মুখীন হতে হয়। তৎকালীন গোঁড়া পন্ডিতেরা প্রমাণ দাবী করতে থাকেন। পাস্তুর পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণ করে দেখান যে কখনই জড়পদার্থের থেকে সৃষ্টি হয় না। জীবনের – জীবন আসে জীবন থেকেই।
তিনি বলেন যে একটি জীবাণুমুক্ত বায়ুনিরােধক খাদ্যের কৌটায় ( seated cannedfood') কখনই অন্য জীবের সৃষ্টি হয় না। অজৈব পদার্থ থেকে জৈব কোষের তৈরী হওয়া তাে দূরের কথা, জৈব পদার্থ (organic materials) যেমন বিভিন্ন শস্যদানার গুড়াে প্রভৃতির মিশ্রণ থেকে কোন পরিস্থিতিতেই, কোন বিক্রিয়া দ্বারাই প্রাণশীল চেতন কোন জীব সৃষ্টি করা যায় না।
লুই পাস্তুরের এ-সম্বন্ধে বিখ্যাত কিছু উক্তিঃ
১. “Every living thing from a living thing." * প্রত্যেক জীবিত বস্তুর উৎস অন্য একটি জীবিত বস্তু থেকে
২. "Spontaneous generation is a chimera ( illusion)" “স্বতঃস্ফূর্তভাবে জীবন সৃষ্টির ধারণা একটি অলীক বিভ্রান্তি মাত্র।”
৩. “Omne Vivum e Vivo”— ফরাসী ভাষা ( পাস্তুর ছিলেন ফরাসী বিজ্ঞানী), যার অর্থঃ “ প্রত্যেক জীব তার পূর্বের কোন জীব থেকে আসে।”
Comments
Post a Comment