বিজ্ঞানের যুগে বিশ্বসভ্যতা || উন্নত বিশ্ব কতখানি নিরাপদ ? পরিবেশ কি বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে? PAGE-4
পরিবেশ কি বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে?
আধুনিক সভ্যতা ভীষণভাবে যন্ত্রনির্ভর। বছরে কোটি কোটি গাড়ী উৎপাদন হচ্ছে লক্ষ লক্ষ একর জমি জুড়ে থাকা ফ্যাক্টরিতে। জাহাজগুলির আকার কিলােমিটার ছাড়াচ্ছে, বিমানগুলি হয়ে উঠছে দৈত্যাকার।
এছাড়া লক্ষ লক্ষ শিল্প কারখানায় তৈরী হচ্ছে সভ্য মানুষের আরামবিলাসের জন্য কোটি কোটি যন্ত্রোপকরণ, সরঞ্জাম।
বায়ুতে মিশছে কোটি কোটি টন গ্রীন হাউস গ্যাস। গ্রীন হাউস গ্যাস বলতে বােঝায় সেই সব ক্ষতিকর বা বিষাক্ত গ্যাসকে, যা শীতার্ত অঞ্চলে সবজি চাষের গ্লাস হাউসের মতাে সূর্যের হিট রেডিয়েশন বা তাপ বিকিরণ প্রতিহত করে, হিট-ট্র্যাপ’হিসাবে কাজ করে এগুলি।
বর্তমানে বিশ্বের প্রথম ৪০টি শিল্পোন্নত দেশের গাড়ী-শিল্প কারখানা এই GH গ্যাস উৎপাদন করছে বছরেএক হাজার আটশাে কোটি। টন। সারা পৃথিবীর সবদেশ ধরলে প্রায় তিন হাজার কোটি টনে দাঁড়াবে প্রতি বছর।
ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছেবিশ্ব।
‘বিপর্যয় আর বর্তমান অবস্থায় ফারাক মাত্র ১.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। পৃথিবীর (গড়) তাপমাত্রা ওইস্তরে পৌঁছে গেলেই হু হু করে গলতে শুরু করবে মেরু অঞ্চলের বরফ, মহাসাগরগুলিতে জলােচ্ছাস হবে, অরণ্য ধ্বংস হয়ে যাবে, কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হবে, কোনও কোনও দেশ প্রচন্ড খরার মুখে পড়বে।
পৃথিবীর পরিবেশটাই আমূল বদলে যাবে। এখনই সতর্ক না হলে তার ১০-১৫ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর তাপমাত্রা পৌঁছে যাবে বিপর্যয়ের স্তরে।
Difference Polar Sea Ice 1989-2020
বিপর্যয়ের এই অশনি সংকেত কাগুজে হুজুগ নয়, খােদ বিজ্ঞানীদেরই সমীক্ষার ফলশ্রুতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার তত্ত্বাবধানে দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানী, শিল্পপতি ও রাজনীতিকদের নিয়ে গঠিত টাস্ক ফোর্স ব্যাপক পরিবেশ সমীক্ষা চালিয়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে যে রিপাের্ট তৈরী করেছে তাতেই এমন আশঙ্কা করা হয়েছে।
ঐ রিপাের্টটি সভ্যতা বাঁচাতে প্রতিটি উন্নত উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের পরিকল্পনা রচয়িতাদের কাছে তা পাঠানাে হবে, যাতে বিপর্যয় এড়াতে তারা নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু তাতে বিশেষ ফলােদয় হবে কি?
মানুষের যে উদগ্র লােভের লেলিহান শিখা পৃথিবীকে উত্তপ্ত করছে, সেই লােভ কমবে কোন যাদুদন্ডে? যেমন খােদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রীন হাউস গ্যাস কমানাের চুক্তি কিয়েটো প্রােটোকলে স্বাক্ষর করেনি,অথচ পৃথিবীতে প্রতি বছর মানুষ তাদের যন্ত্রসভ্যতা চালাতে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে ঢালে, তার ২০ শতাংশ অবদান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
শিল্প বিপ্লবের আগে ১৭৫০ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে বিজ্ঞানীরা সমীক্ষা করেন; সেই অনুসারে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ১ ডিগ্রী। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৪০০ পিপিএম-এ পৌঁছাবে।
পৃথিবীর তাপমাত্রা ১৭৫০ সালের তাপমাত্রার চেয়ে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়বে। বর্তমানে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ৩৮৯ পি পি এম, আর বছরে ২ পিপি এমের বেশি ঐ গ্যাস বাতাসে মিশছে।
এইভাবে চললে ১০-১৫ বছরের মধ্যে ৪০০ পিপিএমে পৌছাবে কার্বনডাই অক্সাইড, বাড়বে তাপমাত্রা, মেরুর বরফ গলে বাড়বে সমুদ্রের জলস্তর। অন্য একদল বিজ্ঞানীদের সমীক্ষা অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই সমুদ্রের জলস্তর বছরে ২ মিলিমিটার বাড়তে শুরু করেছে, ভবিষ্যতে এই বৃদ্ধি আরাে ত্বরান্বিত হবে।
পৃথিবী যত উন্নত হচ্ছে ,মানুষ টাটা বেশি যন্ত্রনির্ভর হয়ে যাচ্ছে ,বিজ্ঞান যতটা উন্নত হচ্ছে ,আমাদের পরিবেশ ততটা বিষাক্ত ও দূষিত হচ্ছে ,কোরোনার মতো মহামারী সারা বিশ্বে ছাড়িয়ে পড়ছে ,পৃথিবীর উভয় মেরুতে বরফ গলছে ,অনেক শহরে বায়ু মণ্ডল দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে গেছে। এখানে কাউকে ছোট করাহচ্ছে না ,কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে পরিবেশের কথা ,প্রতিটি জীবের জীবনের কথা ,কিন্তু আমার পাঠক দের কাছে প্রশ্ন বিজ্ঞান চিন্তা ধারা কে নিয়ে যদি সমাজকল্যানে কাজে লাগানো হয় তাহলে কেমন হবে ?
Comments
Post a Comment