মহাবিশ্বের উদ্ভবঃ দুর্ঘটনা না সুপরিকল্পনা ? মহাবিশ্ব ঃ সত্যিই সৌরজগৎ কি এক ‘কসমিক অ্যাকসিডেন্ট’?PAGE-35
মহাবিশ্ব ঃ সত্যিই সৌরজগৎ কি এক ‘কসমিক অ্যাকসিডেন্ট’?PAGE-35
যদি সুন্দর সুশৃঙ্খল কোন শহরে আমরা যাই, তাহলে শহরটি দেখে আমরা বুঝতে পারি যে এই শৈল্পিক ইমারত-বিন্যাস, এই সৌন্দর্য-শৃঙ্খলার পিছনে রয়েছে সুপরিকল্পনা।
বর্তমান বিশ্বের একটি অন্যতম মেগাসিটি লন্ডন। শহরটিকে সুশৃঙ্খল রাখতে কি পরিমাণ মানবীয় বুদ্ধিমত্তার প্রয়ােজন, একটি দৃষ্টান্তে স্পষ্ট হতে পারে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য হাজার হাজার ট্রাফিক কর্মীর পাশাপাশি রয়েছে ৭ লক্ষের বেশি স্ট্রীট সারভেল্যান্স ক্যামেরা।
অর্থাৎ ৮০ লক্ষ মানুষের এই শহরের প্রতি ১৪ জনের জন্য একটি ক্যামেরা। দেড় হাজার বর্গকিলােমিটারের এই শহরের রাস্তার প্রতিমিটার প্রতিক্ষণ সার্ভে করা হচ্ছে ৭ লক্ষ ক্যামেরার সাহায্যে। কিন্তু তবুও তৈরী করা যায়নি দুর্ঘটনা-প্রুফ সিস্টেম।
প্রতিবছর গড়ে ৭০০০ মানুষের মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, বুদ্ধিমত্তার প্রয়ােগ সত্ত্বেও একটি শহরকেও করা যায়নি অ্যাকসিডেন্ট ফ্রী।।
পাশাপাশি, অরেকটি দিক। আমরা আমাদের মহাকাশে ভাসমান স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ গুলির জন্য গর্বিত এটি মানবীয় বৈজ্ঞানিক প্রতিভার উৎকর্ষের অন্যতম নিদর্শন।
কিন্তু মাত্র ৫০ বছর স্পেস বা মহাকাশ-এ মানুষের কার্যকলাপের পর, এখন মহাকাশের অবস্থা হয়ে উঠছে প্রায় কোলকাতার ব্যস্ত রাস্তার মতাে। উপগ্রহ, রকেট, স্পেস-স্টেশন, পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতির হাজার টুকরাে –‘স্পেস জাংক’এ মহাকাশের অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে যে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এইভাবে চললে অদূর ভবিষ্যতে মহাকাশে উপগ্রহ উৎক্ষেপণ-বন্ধ রাখা ছাড়া গত্যন্তর থাকবেনা।
বুদ্ধিমত্তার প্রয়ােজন সত্বেও এড়ানাে যাচ্ছেনা আনুষঙ্গিক বিপত্তি। পুরাে পৃথিবী গ্রহটি তাহলে কিভাবে এত সুন্দর, সুশৃঙ্খল—কোন বুদ্ধিমত্তার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সম্ভব ?
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অত্যন্ত জটিল ও সূক্ষ্ম কার্যব্যবস্থা দেখে যে কোনাে বুদ্ধিশীল, মানুষই উপলব্ধি করতে পারেন যে এই কার্য-ব্যবস্থার পিছনে রয়েছে এক মহা-রূপকারের পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ।।
তাহলে, বিজ্ঞান সেই মহাপরিকল্পকের সন্ধান পাচ্ছেনা কেন?
জড়বিজ্ঞানের আবিষ্কার-পদ্ধতি বা ‘মেথােডলজি’র কিছু অন্তর্নিহিত ত্রুটি বা সিমাবদ্ধতার মধ্যে নিহিত রয়েছে এর কারণ।
বিজ্ঞানের গবেষণা এই পূর্বধারণা বা বলা যায় অন্ধবিশ্বাস দিয়েই শুরু হয় যে, ভৌতিক নিয়মই সর্বেসর্বা। এই নিয়মের কোন স্রষ্টা নেই। সুতরাংস্রষ্টার অনুসন্ধানের কোনাে চেষ্টা সেখানে নেই।
দ্বিতীয়তঃ, তাদের গবেষণাগুলি জড় ইন্দ্রিয়-নির্ভর।। জড়-ইন্দ্রিয়গুলি জড় বস্তুরই সন্ধান দিতে পারে, কোনাে অতীন্দ্রিয় সত্তার নয়। ঠিক যেমন আত্মা জড়-ইন্দ্রিয়গােচর নয়।
কিন্তু যেমন দেহে চেতনার অস্তিত্ব দেখে আমরা জীবন বা আত্মার উপস্থিতি অনুমান করতে পারি, তেমনি পরম-চেতন সত্তা পরম-পুরুষ ভগবানের অস্তিত্ব সম্বন্ধেও আমরা নিঃসন্ধিগ্ধ হতে পারি, যদি আমাদের বােধ-বুদ্ধি পূর্ব-ধারণার দ্বারা সংস্কারগ্রস্ত (biased) না হয়ে পড়ে।
ধরা যাক, এস্কিমাে জাতির কোনাে ব্যক্তি একটি সােলার ব্যাটারী চালিত স্বয়ংক্রিয় ঘড়ি রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখল। সেটি আপনা-আপনি চলতে থাকায়, তারা সিদ্ধান্ত করল যে যেমন একটি গাছ, ফুল, ফল ‘আপনা থেকেই’ উৎপন্ন হয়, তেমনি এটিও আপনা থেকেই উদ্ভত হয়েছে।
কেউ কেউ ঘড়ির ভিতরের জটিল যন্ত্র ব্যবস্থার রহস্য ভেদ করে ফেলল। এভাবে তারা স্বয়ংক্রিয় ঘড়িটিকে রূপকার বা ডিজাইনারহীন, যথার্থ অর্থেই ‘স্বয়ংক্রিয়’ আখ্যা দিল। তাদের এইরকম বিচার বুদ্ধি যেমন হাস্যকর, তেমনি জটিল বিশ্বব্যবস্থার কোন পরিকল্পনা ছাড়াই উদ্ভূত হওয়ার যুক্তিটিও একই রকম হাস্যকর।
Comments
Post a Comment