মহাবিশ্বের উদ্ভবঃ দুর্ঘটনা না সুপরিকল্পনা : প্রকৃতি থেকে অভিব্যক্ত মহাবিশ্ব, প্রকৃতি কি বুদ্ধিমত্তাবিহীন ? PAGE-33
প্রকৃতি থেকে অভিব্যক্ত মহাবিশ্ব
প্রকৃতি কি বুদ্ধিমত্তাবিহীন ?
PAGE-33
মহাবিশ্বের সৃষ্টি বৈচিত্র্য দেখে মানুষ আশ্চর্য হয়েছে; মেঘ গর্জন, বজ্রপাত, অগ্ন্যুৎপাত, সুবিশাল সমুদ্র মানুষকে হতবাক করেছে বিস্ময়ে-ভয়ে।
আদিম মানুষের এই ভয় আর বিস্ময় থেকে জন্ম হয়েছে ধর্মের, জন্ম হয়েছে ঈশ্বরের ধারণার। তারপর বিভিন্ন জাতি-গােষ্ঠীর মধ্যে সেই বিশ্বাস হাজার হাজার বছর ধরে লালিত হতে হতে উদ্ভব হয়েছে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের।
এই সব ধর্ম তাই মানুষের আদিম সন্ত্রস্ততা, বিস্ময়, কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের প্রতিফলন। অতএব, ভগবানের ধারণা মানুষেরই কল্পনা-প্রসূত।'—এই হচ্ছে ধর্ম ও ভগবান সম্বন্ধে নাস্তিকদের লালিত ধারণা।
কিছু জড়বাদী বিজ্ঞানীও দেখাতে চেষ্টা করেন যে প্রকৃতির অন্ধ ভৌতিক নিয়মের দ্বারাই (Blind Forces of Nature') সবকিছু সংঘটিত হয়। কোন নিয়ন্তা নেই, পরিচালক নেই।
কিন্তু সাম্প্রতিকতম বিজ্ঞানই এইসব জল্পনা-কল্পনাকে ধুলিস্যাৎ করছে। সৃষ্টি, মহাবিশ্ব, প্রকৃতি কোন পরম বুদ্ধিমত্তার স্পর্শশূন্য, কেবলই ‘অ্যাকসিডেন্টাল’, ঘটনাচক্রের পরিণতি বিজ্ঞানীরাই এই বৈজ্ঞানিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন।
প্রাকৃতিক নিয়মগুলিই এক অপূর্ব বুদ্ধিমত্তাকে অভিব্যক্ত করছে। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের জটিলতা ও বিশালতা এতই বিপুল যে মানুষের ক্ষুদ্র মনের ধারণায় তার সাধারণীকরণ করে কিছু সরল সূত্রের ভিত্তিতে সবকিছুকে দেখা এক সখের গোঁড়ামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
অন্ধ ভৌত শক্তি’ যদি অভিব্যক্ত করে বিস্ময়কর বুদ্ধিমত্তা ও সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ? যেমন হিমালয়ের ধস থেকে একটি সুন্দর সুদৃশ্য শহর সৃষ্টি হয়ে যায় না, তেমনি অ্যাকসিডেন্ট,চান্স, বিস্ফোরণ থেকে কিভাবে মহাকাব্যিক শিল্প-সুষমাপূর্ণ সবুজ-সুন্দর পৃথিবীর সৃষ্টি হতে পারে ?
বরং মহাবিশ্বের বিস্ময়কর শৃঙ্খলা, জটিলতা ও সুপরিকল্পনার গবেষণালব্ধ তথ্যাবলী বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মেধাসম্পন্ন বিজ্ঞানীদেরও বিস্ময়ে বিমুগ্ধ করে দিচ্ছে। বিজ্ঞান-পত্রিকা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে যেমন মন্তব্য করা হয়েছে, যে মানুষ এখন এই মহাবিশ্ব সম্বন্ধে যা জানতে পারছে, তা তাকে বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়েছে (Left him stunned”)।
জড় বস্তু ও শক্তি স্বাধীন নয়, তারা সুনির্দিষ্ট নিয়ম ('Laws) এবং প্যাটার্ন মেনে চলে; আর ঐ Laws’ ও ‘patterns’ স্বাধীন, অ্যাকসিডেন্টাল নয়। প্রকৃতির নিয়ম ('Laws of Nature)যে একজন বুদ্ধিমান নিয়ামক নিয়ন্তার (Intelligent Being') সৃষ্টি, নিয়মগুলির মধ্যে নিহিত বুদ্ধিমত্তাই তার প্রমাণ দেয়।
বিজ্ঞানী ও লেখক ক্যারােল লােয়েকলার বলেন যে বিজ্ঞানী যদি গোঁড়া (Biased) না হন তাহলে তিনি অজস্র প্রমাণ পাবেন পরম নিয়ন্তার।
সমস্ত গোঁড়ামি ও ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে আমরা যদি এই সুন্দর সৃষ্টি -সুষমা অবলােকন করি, তাহলে এই অনুপম শিল্প-সুষমামন্ডিত সৃষ্টিবৈচিত্র্যের অনবদ্য রূপকারের প্রতিসম্ভ্রম বােধ না করে পারি না। যার সেই অনুভব-শক্তি, দর্শন-শক্তি নেই, আইনস্টাইন তাদের মৃতের সঙ্গে তুলনা করতে দ্বিধা করেননি ।
আইনস্টাইন ঃ “সবচেয়ে সুন্দর ও সবচেয়ে গভীর যে আবেগানুভূতির করতে পারি, তা আধ্যাত্মিক রহস্যের অনুভবের মধ্যে। সকল প্রকৃতি-বিজ্ঞানের থেকে এটি এক উৎসারিত নিঝর স্বরূপ। যার কাছে এই সুন্দরতম আবেগানুভূতি অজ্ঞাত, যে এই বিশ্বের সৃষ্টি-সুষমা দর্শন করে সেই পরম বুদ্ধিমত্তার সামনে সসম্ভ্রম শ্রদ্ধায় দাঁড়াতে পারে না, সে একজন মৃত ব্যক্তির চেয়ে উন্নত নয়। আমাদের উপলব্ধ এই বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে যে এক শ্রেষ্ঠতর যুক্তিশীল বুদ্ধিমত্তা প্রকাশিত হয়েছে , তার প্রতি গভীরভাবে অনুভূত প্রত্যয় ভগবান সম্বন্ধে আমাদের ধারণা গঠন করে।” * *
Comments
Post a Comment