দেহ না থাকলে কিভাবে থাকবে অস্তিত্ব? আত্মা রূপহীন ব্যক্তিত্বহীন নয় ।Page-171
দেহ না থাকলে কিভাবে থাকবে অস্তিত্ব?
আত্মা রূপহীন ব্যক্তিত্বহীন নয় ।
এটিও অনেকের প্রশ্ন। জড় দেহের সমস্যা রয়েছে, কিন্তু তবুও এই দেহ দিয়েই পাওয়া যায় বেচিত্রের স্বাদ, রূপ-রস-গন্ধের অনুভূতি, আনন্দ। দেহহীন হলে অস্তিত্বের অর্থ কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতায় জানান, এই জড় দেহ নশ্বর, ধ্বংসশীল —এমনকি সমগ্র জড় জগৎটিও ধ্বংসশীল। সেজন্য, এই জগৎ শাশ্বত আত্মার নিত্য আলয় নয়। ভগবদ্গীতায় অষ্টম অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন,
' পরস্তস্মাস্স্থু ভাবােন্য ব্যক্তব্যক্তাদ সনাতনঃ
– এই ক্রমাগত ধ্বংস সৃষ্টি প্রকাশিত -অপ্রকাশিত হতে থাকা জড় জগতের পরপারে একা সনাতন (eterial) জগৎ রয়েছে। এই জড়জগতের সবকিছু ধ্বংস হলেও সেখানে কোন কিছু ধ্বংস হয় না। সেটিই শ্রীকৃষ্ণের পরম ধাম যেখানে গেলে আর ফিরে আসতে হয় না । সেটিই আত্মার প্রতিটি জীবের শাশ্বত আলয়।
কারাগারে গেলে আসামীদের পাথর ভাঙতে দেখা যায়। দীর্ঘ দিনের কোন আসামীকে যদি বলা হয়, “এখানে আর নয়, বাইরে এসাে” – সে যদি অস্বীকার করে, সে যদি এমন মনে করে জেলের বাইরে আবার জীবন কোথায় ?
তাহলে তাকে আমরা মনােবিকারগ্রস্ত বলব। তেমনি এ-জগতের জড় দেহধারী বদ্ধজীব স্মরণাতীত কাল থেকে এই জড়জগৎরূপ কারাগারে বন্দী থাকায় এর বাইরে জীবনের অস্তিত্ব ভুলে যায়। কিন্তু কারাগারের জীবন অপূর্ণ (Inperfect) জীবন, বন্দীদশা, বেদনাময়, এটি প্রকৃত জীবন নয়।
আত্মার একট নিত্য চিন্ময় রূপ রয়েছে, যাকে বলা হয় ‘স্বরূপ —আত্মা রূপ বা আকার, মন, ইন্দ্রিয় রহিত নয়, তবে সবই চিন্ময় ও শাশ্বত, ধ্বংসশীল জড় পদার্থে তৈরা নয়। জড় পদার্থের সদা পরিবর্তনশীল নশ্বর শরীরকে বলা হয় ‘বিরূপ’ এটি ব্যক্তির প্রকৃত রূপ (Identity) নয়। এই বিরূপ থেকে মুক্ত হবার অর্থ অস্তিত্বহীন হওয়া নয়- নিজের যথার্থ স্বরূপে অবস্থিত হওয়া (মুক্তিহির্তা-অন্যথারূপম স্বরূপেণ ব্যবস্থিতি), এবং সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ ভগবানের সান্নিধ্যে নিত্য আনন্দময় থাকা। চিন্ময় জগতে ভগবদ্ধামে শাশ্বত বৈচিত্র্য রয়েছে পূর্ণরূপে। এই জড়জগতটি তার একটি আভাস, ছায়া বা অপূর্ণ প্রতিফলন মাত্র।।
Subscribe For Latest Information
Comments
Post a Comment