বৈদিক সভ্যতার প্রাচীনত্বের কয়েকটি দৃষ্টান্ত।Page-117
বৈদিক সভ্যতার প্রাচীনত্বের কয়েকটি দৃষ্টান্ত।
সংস্কৃত ভাষাঃ ভাষা সভ্যতার উৎকর্ষের অন্যতম প্রমাণ। এনসাইক্লোপিডিয়াতে এই ভাষার নামকরণের অর্থ দেওয়া হয়েছে – Adorned, Cultivated, Perfected’ । সংস্কৃত ভাষাকে পৃথিবীর ভাষাগুলির জননী’ বলা হয়। যেমন, পিতা-মাতা শব্দের সংস্কৃত পিতরঃ, মাতারঃ, ইংরাজীতে ‘ফাদার, মাদার’জার্মান- ‘প্যাটার’ ম্যাটার’ইত্যাদি। এখনাে এই সমৃদ্ধ। দেবভাষা সংস্কৃতের ব্যাকরণ ভালভাবে শিখতে একজন পন্ডিতের ১২ বছর সময় লাগে।
নাসার ক্যালিফোর্ণিয়ার অ্যাসেস রিসার্চ সেন্টার , কম্পিউটার প্রসেসিং -এর জন্য সহায়ক, আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সের জন্য প্রয়ােজনীয় ভাষা নিয়ে গবেষণা করে থাকে; তারা। দেখেছেন যে নিখুঁত সিনট্যাক্স ও সেমান্টিক্সয়ের সংস্কৃত ভাষাই এজন্য একমাত্র উপযােগী।
নাসার অ্যাসেস রিসার্চ সেন্টারের গবেষক রিক বিগস তার নলেজ রিপ্রেজেনটেশান অন সংস্কৃত অ্যান্ড আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স’ প্রবন্ধে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত জানিয়েছেন, যে কেউ ওয়েবসাইটে সেটি দেখে নিতে পারেন (www.gosai.com/science/sanskritnasa.htm)। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ভাষা কি উন্নত সভ্যতার পরিচয়বাহী না আদিম মানুষের অন্ধত্ব-অজ্ঞানতার দ্যোতক ? বাংলা ভাষার ভান্ডারের সমস্ত সমৃদ্ধ ও উন্নত শব্দগুলি তৎসম, অর্থাৎ সংস্কৃত থেকে নেওয়া, বিশ্লেষণ করেছেন সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় সূর্য শব্দের ইংরাজীতে একটি শব্দ আছে –সান, সংস্কৃতে কমপক্ষে ১০০টি প্রতিশব্দ রয়েছে*; ইংরাজীতে পদ্ম-একটি শব্দ লােটাস, সংস্কতে কমপক্ষে ৫০টি।* * ছন্দ,(১২টি নির্দিষ্ট কাব্যিক ছন্দ) অলংকার, শব্দ-বিন্যাস ও ভাব-সৌকর্যে এই ভাষা অদ্বিতীয়।
উঃ কিরণ চৌধুরী স্নাতক স্তরের পাঠ্য বই ‘ভারতের ইতিহাস বইয়ে লিখেছেন যে মহাভারতের যুদ্ধ ঐতিহাসিক বাস্তবতা : পুরানাে দিল্লী ছিল প্রাচীন হস্তিনাপুর, সেখানে খননকার্য করে মহারাজ যুধিষ্ঠিরের রাজপ্রাসাদের প্রত্নতাত্বিক প্রমাণ মিলেছে সেখানে লেখা হয়েছে (পৃ-৫৪)।
বর্তমান থানেশ্বর, দিল্লী এবং উত্তর গাঙ্গেয় দোয়াব অঞ্চল করুক্ষেত্র, অর্থাৎ করুদের ক্ষেত্র বা এলাকা নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে হরিয়ানার অন্তর্গত করুক্ষেত্র একটি শহরও তীর্থক্ষেত্র।....... প্রাচীন হস্তিনাপুরের নানা নিদর্শন উৎখননের ফলে আবিষ্কৃত হইয়াছে।
” অবশ্য সুপ্রাচীন এইসব ঐতিহাসিক বাস্তবতা নিয়ে আধুনিক ঐতিহাসিকদের জল্পনা - অনুমান-বিতর্ক বৈদিক শাস্ত্রের তথ্যে, ঋষি-মুনিদের রচিত মহাগ্রন্থগুলিতে বিধৃত সত্যকে আচ্ছাদিত করে জনমানসে ব্যাপক বিভ্রান্তি তৈরী করেছে। পুরাণ ভারতের প্রাচীন ইতিহাস; মহাভারত, রামায়ণ আনুপূর্বিক সত্যঘটনার বর্ণনা :মহা ঋষি, মুনিরা দীর্ঘকাল কঠোর তপস্যার পর গল্প, উপন্যাস লিখতে বসতেন না, বর্তমানের অবিশ্বাসী মানুষদের এই সত্যে আস্থাশীল হওয়া কঠিন।
শুধু মহাভারত আয়তনে ইলিয়াড ও ওডিসির সম্নিলিত আয়তনের চারগুণ।
সংস্কৃত সাহিত্য-ভান্ডার বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে তুলনারহিত। মেরিন আর্কেওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া পাঁচ কোটি টাকার প্রােজেক্ট অনুসারে দ্বারকার অদুরে গুজরাটের উপসাগরে জলের ৪০ ফুটনীচে এক প্রাচীন নগরীর ভগ্নাবশেষ পেয়েছেন। কুরুক্ষেত্রের ‘শ্রীকৃষ্ণসংগ্রহালয় , যাদুঘরে তার নমুনা সংরক্ষিত রয়েছে।।
* বাংলা প্রতিশব্দে এইরকমঃ সূর্যঃ অর্ক, অরুণ, অংশুমৎ, অংশুমান, অঞ্জিষ্ঠ, অংশুপতি, অংশুহস্ত, অংশুধর, অর্যমা, অহঙ্কার, অহিমাংশু, অশীতকর, অহঃপতি, অর্চিত্মান, অদ্রি, অস্বরিষ, অমণি, আদিত্য, ইতু, ঋচীক, খরকর, ধরাংশু, খমণি, গ্রহরাজ, গ্রহপতি, গহাঙ্গীশ, সতপাঃ, বিয়ম্মণি, রবি, ভাস্কর, ভানু, বিবস্বান, বিভাবসু, পুষন, তপন, মিহির, দুমণি, দিবামণি, দিনপতি, দিবাকর, দিবানাথ, দিবাবসু, দিনকর, দিনেশ, দিনমণি, দিননাথ, মাতন্ড, ঋচীক, সবিতা, পূষণ, পৃষা, ভানুমান, সহস্ররশ্মি, কমলিনীনায়ক, বিকর্তন, উষাপতি, তমােপহ, তমােঘ্ন, তমােনাশ, তমােহর, তমােহা, তিমিরারি, গ্রহাধীশ, প্রদ্যোতন, পদাপাণি, সর, সরােত্তম, মরীচিমালী, কিরণমালী, প্রভাকর, বিভাকর, ব্ৰধ, ভাস্বত, ভাস্বান, সপ্তাশ্ব, দ্বিনীশ, ত্বিষাস্পতি, ময়খমালী, স্বাভাবি, বীরিহােত্র, সহস্রকর, কাশ্যপেয়, শূর, লােলার্ক, ধামকেশী, সপ্তর্যাপ্ত, সপ্তাশ্ববাহন, সুত্র, উফরথি, মিত্র, বিরােচন, চিত্রভানু, সহস্রাংশু, তাপন, জ্যোতির্মান, চিত্ররথ, অহিমাংশু, হরিদশ্ব, সুরি, তপন, জগচ্চক্ষ, তাপন, জ্যোতিষ্মন, চিত্ররথ, হিরণ্যরেতা ইত্যাদি।
** পদ্ম ঃ কমল, কুবল, কুবেল, শতদল, কুমুদ, কুবলয়, কহার, কুমুদী, উৎপল, পঙ্কজ, কৈরব, অজ, অম্বুজ, আত্মেজ রাজীব, নলিন, অরবিন্দ, নলিনী, শ্রীপর্ণ, পুস্কর, তামরস, সরােজ, সরসিজ, সরােরুহ, পুন্ডরীক, সলিলজ, বিসপ্রসন, বিসকুসুম, ইন্দিবর, কালকঞ্জ, লালপদ্ম, কোকনদ, রক্তপদ্ম, রক্তকুমুদ, সিতাজ, শ্বেতপদ্ম, কুচ্ছ, সিতাভোজ, বিসজ, রাত্রিহাস, বায়ুব, কঞ্জ, নীরজ, ইন্দিরালয়, কুশেশয়, সরােজ, সরসিজ, সবােরাহ, পুন্ডরীক, সলিলজ—ইত্যাদি।
Comments
Post a Comment