বাচ্চা ইল মাছের সমুদ্র অভিযান। ইল মাছের সম্পূর্ণ জীবন বৈচিত্রের বর্ণনা || Page-101
বাচ্চা ইল মাছের সমুদ্র অভিযান।
ইল মাছের সম্পূর্ণ জীবন বৈচিত্রের বর্ণনা
আটলান্টিক মহাসাগরে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জ ও বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মধ্যে অবস্থিত সারগ্যাসাে সাগর (Sargasa Sea)। সুদূর ইউরােপের নদী, হ্রদ থেকে ইল মাছেরা এখানে এসে 1,300 থেকে 2,500 ফুট সমুদ্র গভীরে ডিম পাড়ে। তারপর পিতা-মাতারা সে স্থান ছেড়ে চলে যায়। কখনাে তারা আর তাদের সন্তানদের দেখতে পায় না, প্রশিক্ষণও দেয় না, তারা চলে যায়, আর এর অল্প কিছুকাল পরেই, পিতা-মাতা ইলেরা মারা যায়।
তাহলে ইলের বাচ্চাদের কি হয়?
বাচ্চারা উপসাগরীয় স্রোতের আশ্রয়ে যাত্রা শুরু করে ইউরােপের জলের ৭০০ ফুট নীচ দিয়ে। সমুদ্র স্রোত তাদের সাহায্য করে বটে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা কাঠের গুড়ি/খন্ড ফেলে দেখেছেন যে সেগুলি দশমাসে ইউরােপে পৌছায়, পক্ষান্তরে ইল মাছেরা পৌছায় দেড় বছর পরে।।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলাে, ইল মাছগুলাে বিশাল ইউরােপ মহাদেশের হাজার হাজার মাইল বিস্তৃত উপকূলে পৌঁছানাের পর কোন অজানা উপায়ে জেনে যায় উপকূলের কোন কোন নদী দিয়ে যেতে হবে, তারপর কোন্ কোন্ খাড়ি বা খাল দিয়ে ঠিক কোন্ কোন্ জলাশয়ে যেতে হবে – ঠিক যেখানে তাদের পিতা-মাতারা থাকত।
শুধু এইটুকুই নয়, সারগ্যাসাে সাগর থেকে 5000 কিলােমিটার দুরে ইউরােপ উপকূলে এসে পৌছালে, নদীতে ঢােকার আগে তাদের দেহ পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এই সময় তারা সম্পূর্ণ খাওয়া বন্ধ করে। তাদের দেহ সরু ও লম্বা হয়, আর পার্শ্ব পাখনা (Pectorial fins) গজায়, যা সাঁতার কাটার এক জটিল ‘গিয়ার’ বিশেষ। এইভাবে তাদের সঠিক সময়ে শরীরের সঠিক পরিবর্তন সম্পূর্ণ হবার পর তারা তাদের বিভিন্ন নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
কিছু ইল চলে যায় বাল্টিক সাগরে, কিছু ইল ফ্রান্সের নদীগুলিতে, অন্যান্যরা জিব্রাল্টার প্রণালীর মধ্যে দিয়ে ভূমধ্যসাগরে। কিছু চলে যায় সােজা কৃষ্ণ সাগরে (Black Sea)। এই ভাবে এরা সুদুর মহাসাগর থেকে এসে নদী দিয়ে স্থলভাগের কয়েকশাে মাইল ভিতরে ঢুকে পড়ে সেইসব নির্দিষ্ট জায়গায় চলে যায়, যেখানে তাদের পূর্বপুরুষেরা থাকত। এইখানে কয়েক মাস থাকার পর, তারা পুনরায় খাওয়া শুরু করে, তাদের স্বচ্ছ দেহপূর্ণবয়স্ক ইল মাছের মতাে হয়, পিঠ ও পাশগুলি হলুদ রঙের হয়।
কয়েক বছর এইভাবে এখানে কাটাবার পর তাদের দেহের হলুদ রঙ চলে গিয়ে তারা কালাে হতে শুরু করে (গভীর সমুদ্র জলে অন্য শিকারী জলচরদের নজর এড়ানাের উপযােগী), এবং তাদের চোখ বড় হয় (গভীর জলে দেখার জন্য)। তারা বুঝতে পারে, সময় এসে গেছে।
তারা পুনরায় শুরু করে তাদের ফিরতি যাত্রা—জলাশয় থেকে নদী, নদী থেকে আটলান্টিক (অতলান্তিক), সেখান থেকে কন্টিনেন্টাল সেল্প’ সারগ্যাসাে সাগর, ৫২০০ কিলােমিটার দূরে। এই সময় বিজ্ঞানীরা জলাশয়ের ইলদের নদী-সংযােগহীন পুকুরে ছেড়ে দিয়ে দেখেছেন যে ঐসব ইল পুকুর থেকে উঠে শিশির সিক্ত স্থলভূমি দিয়ে যাত্রা করেছে নদীতে পৌঁছানাের জন্য।
ইউরােপের নদীর ইলদের দেহে ছােট রেডিও ট্রান্সমিটার পরিয়ে দেখেছেন, তারা 5200 কিলােমিটার দূরে ছয় মাসে পৌঁছাচ্ছে সারগ্যাসাে সাগরে। সেখানে গিয়ে ডিম পাড়ার পর তাদের ছুটি, সেখান থেকে, তারপর জীবন থেকে।
তাদের সন্তনেরা, বাচ্চা ইলেরা শুরু করবে আবার একই মহাসাগরীয় অভিযাত্রা। তারপর কয়েক বছর পর, কিভাবে যেন খবর পাবে ফেরার সময় হয়েছে শুরু, ফিরবে হাজার হাজার কিলােমিটার আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে, সাগরের হাজার ফুট তলদেশ দিয়ে।।
কিভাবে তারা দিক নিরুপণ করে ? কিছু বিজ্ঞানী বলছেন আকাশের তারা দেখে। ভাল কথা, কিন্তু তার জন্য তাে অন্ততঃপক্ষে একটি রােডম্যাপ আর ন্যূনতম প্রশিক্ষণের দরকার? কোথায় পেল তারা ? কিভাবে সব তারাদের বাদ দিয়ে কেবল ধ্রুবতারাকে চিনতে শিখল তারা? প্রত্যক্ষ বাস্তব, এই মহাকাব্যিক বিস্ময়ের কোন উত্তর জানা নেই কোন মানুষের।
Comments
Post a Comment