সর্বজীবের মূলগত স্বভাবের ঐক্য (Inherenent similarities of nature of living beings) ||Page-158
সর্বজীবের মূলগত স্বভাবের ঐক্য (Inherenent similarities of nature of living beings)

সমস্ত জীবের মধ্যে তিনটি মৌল প্রবেগ (Basic impetus) দেখা যায় ?
(১) নশ্বর দেহগত অস্তিত্বকে (Temporary bodily existence) শাশ্বত বা চিরন্তন করার প্রবণতা; এজন্য কর্ম করা।
(২) পারিপার্শ্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি বা জ্ঞানার্জন—এজন্য মানুষ এত স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়-গবেষণাগার তৈরী করে।
(৩) আনন্দ লাভের প্রবণতা – এজন্য বিভিন্ন প্রাণী ক্রীড়াকৌতুক করে, মানুষ গড়ে তােলে আমােদ-প্রমােদের অজস্র ব্যবস্থা।
এই তিনটি মূলগত প্রবেগ কম-বেশি সবজীবেই পরিস্ফুট;তার মৌল কারণ—সব জীবদেহে আত্মার উপস্থিতি, আর আত্মার তিনটি গঠনগত উপাদান
(১) সৎ—চিরশাশ্বত অস্তিত্ব
(২) চিৎ–চেতনা বা জ্ঞানময়তা
(৩) আনন্দ আনন্দময় থাকার,
প্রীতি বিনিময়ের প্রবণতা।
জড় পরিবেশে আবদ্ধ হলেও, দেহগত ধারণাতেও ঐ মৌল বৈশিষ্ট্যগুলি প্রকাশিত হয়। সব জীব সহ মানুষের সমগ্র কর্মমুখরতা, জ্ঞানচেষ্টা ও প্রমােদাভিলাষ উৎসারিত হয় আত্মার ঐ তিনটি মৌল বৈশিষ্ট্য থেকে।
যেখানেই জীবন রয়েছে, সেখানেই রয়েছে ভালবাসার প্রকাশ, আনন্দমগ্ন থাকার প্রবণতা, সেবা-প্রীতি। ডলফিনেরাও প্রকাশ করে অদ্ভুত বন্ধুপ্রীতি, মৌমাছিরা থাকে মানুষের মতােই সমাজবদ্ধ। দেহ পােশাকগুলি ভিন্ন ভিন্ন, কিন্তু অন্তর্নিহিত প্রবণতা সকল জীবের মধ্যে একই রকম।

একটি দৃষ্টান্ত : জাপানী এক প্রফেসরের নিত্য সঙ্গী কুকুর হ্যাচিকো তার ইউনিভার্সিটি থেকে ফেরার প্রতীক্ষা করত স্টেশনে । একদিন প্রফেসরের স্ট্রোক হল, হাসপাতালে মারা গেলেন। সংবাদ জানত না কুকুরটি। প্রতীক্ষা চলল স্টেশনে। দিন-মাস-বছর। যাত্রীরা ও স্থানীয়েরা ক্লাব গঠন করে কুকুরটি ভরণপােষণ চালাত। কিছুতেই বাড়ী ফিরল না সে।
১২ বছর পর, তার মৃত্যু হল স্টেশনে। মেয়রের অনুমােদনক্রমে বানানাে হল তার ব্রোঞ্জ মূর্তি- সেটি এখন জনপ্রিয় ট্যুরিষ্ট স্পটে পরিণত হয়েছে। দেহ ভিন্ন, কিন্তু প্রীতি, ভালবাসা? এটি আত্মার অবিচ্ছেদ্য ধর্ম। অস্তিত্ব রক্ষার পাশবিক লড়াইয়ের বেগকে ছাড়িয়ে এই বৃত্তি।
সকলের মধ্যে যদি একটি বস্তু, আত্মা না থাকে, তাহলে দেহের আকৃতি, গঠন, উপাদান ভিন্ন ভিন্ন হলেও অন্তর্নিহিত মৌল স্বভাবগত ঐক্য কিভাবে সম্ভব?
Comments
Post a Comment