জড়জ্ঞান তমােময়-অন্ধত্ব দিয়ে চেতনাকে আচ্ছন্ন করে।Page-129
জড়জ্ঞান তমােময়-অন্ধত্ব দিয়ে চেতনাকে আচ্ছন্ন করে।
শুধু অপরাবিদ্যা, জড়বিদ্যা অধ্যয়নের পরিণতি কি? চেতনা সম্পূর্ণ জড়ভাবাপন্ন (materialistic), জড়গুণদূষিত (contaminated) হয়ে পড়া এবং নিজেকে জড়বস্তু বিক্রিয়া থেকে উৎপন্ন জড় বলে মনে করা। এইভাবে জড়ের সংগে নিজেকে একীভূত করার ফলে চেতনা বিবর্তনের পশ্চাদগতিতে (Devolution) নিম্নতর প্রজাতিতে—এমনকি ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রায় জড়ত্বের অবস্থায় ফিরে যেতে হয় (ভ.গী ১৬.২০)।
এই হচ্ছে নাস্তিকতার স্বাভাবিক পরিণতি, কেননা যে যেমন ভাবে, সে তেমনই হয় (তং তমেবৈতি কৌন্তেয় সদা তদভাব ভাবিত—ভ.গী- ৮.৬)। দেহটি অধ্যাত্মবিজ্ঞান অনুসারে, মনেরই প্রকট-রূপ বা প্রকাশ (Eimbodied form); একটি শিশুকে চোর-ডাকাতের সংগে মিশতে দিলে সে দুষ্কৃতী হয়ে ওঠে, সাধুর সংগে মিশতে দিলে সাধুস্বভাব হয়।
সেজন্য ঈশােপনিষদে বলা হয়েছে, ‘অন্ধ তমং প্রবিশন্তি যেহম অবিদ্যাম উপিসতে’ – যে কেবল অবিদ্যার (Empiric, material knowledge) উপাসনা করে, সে অন্ধকার তমােময় জগতে প্রবেশ করে।
প্রশ্ন উঠবে, অপরা বিদ্যা ছাড়া আমরা জড় দেহের স্বাচ্ছন্দ্য বিধান করব কি করে? স্থাপত্যবিদ্যা না শিখলে বাড়ী তৈরী করা যায় না, শারীরবিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যা না শিখলে বহু মানুষের ঘটবে অকালমৃত্যু। কৃষিবিদ্যা, গণিতবিদ্যা – সব কিছুরই উপযােগিতা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু এতসব বিদ্যা যে দেহটির জন্য, আত্মা, স্পিরিটন নির্গত হওয়া মাত্রই সেটি নিথর হয়ে যায়, সেই মুহূর্তেই শুরু হয় ডিকম্পােজিং – পচন।
বাসাংসি জীর্ণানি– সদা জীর্ণ হয়ে যাচ্ছে এমন পােশাকের জন্য আজীবন বিদ্যা শিক্ষা, জ্ঞান-চর্চা, আত্মার জন্য স্বরূপের প্রতি অন্ধত্ব – এটি কেমন জ্ঞানানুশীলন? কিভাবে আমরা পেতে পারি শাশ্বত অবস্থা— জড়বিদ্যায় তার উত্তর নেই।
সারা পৃথিবীতে সায়েন্স অব সােল – আত্মার বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটিও বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সেজন্য বর্তমান বিশ্বসভ্যতা অন্ধ জড়বাদে আক্রান্ত।
প্রয়ােজন উভয় বিদ্যার সুসমন্বয়, সিন্থেসিস। ঈশােপনিষদে উপদেশ দেওয়া হয়েছে,অপরা(Inferior) এবং পরা (Superior) —উভয় বিদ্যা সুসমন্বিত ভাবে শিক্ষা দেওয়া উচিত, তখনই শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে উঠবে অন্ধ জড়বাদমুক্ত, পূর্ণাঙ্গ।
পৃথিবীর বহু বিজ্ঞানীই চেতনাকে বােঝার জন্য জড়বিজ্ঞানের সীমিত গন্ডির বাইরে ভিন্ন প্যারাইডাইমের সন্ধান করছে। জড় ও চেতন জগতের বিজ্ঞানশাস্ত্র—বৈদিক শাস্ত্রে সেই ভিন্ন প্যারাইডাইমের সন্ধান দেওয়া হয়েছে সভ্যতার উষালগ্নেই, যার মাধ্যমে জডের পরিধি ছাড়িয়ে জানা যায় জড়াতীত সতাকে, চেতন আত্মা, পরম চেতন পরমেশ্বর ভগবানকে, এবং পরম চেতনাময় বা চিন্ময়, শাশ্বত অবিনশ্বর অপ্রাকৃত জগৎ (Spiritual world)-কে।
Comments
Post a Comment