জড় বিজ্ঞান - কেবলই জড়ের বৃত্তে আবর্তন।Page-125
জড় বিজ্ঞান - কেবলই জড়ের বৃত্তে আবর্তন।
জড় বিজ্ঞান জড় ইন্দ্রিয়ের অনুভবের সীমানার মধ্যে আবদ্ধ। সেজন্য জড়বিজ্ঞানে জড় ইন্দ্রিয়ের অতীত কোন সত্য বা বাস্তবতার অস্তিত্ব পরীক্ষা বা প্রমাণ করার কোন সুযােগ নেই। ফলে, এই ত্রুটি জড়বিজ্ঞানকে অপূর্ণ (Imperfect) ও সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।
আধুনিক বিজ্ঞানের সেইজন্য মৌলিক সিদ্ধান্ত বা দাবী (Postualte) হচ্ছে জড় পদার্থ (Matter) ও জড় শক্তির বাইরে আর কিছু নেই। জীবন-চেতনা, কাব্য-শিল্প, প্রেম সবই প্রকৃতির অন্ধ ভৌত শক্তি – 'ব্লাইন্ড ফোর্স অব নেচার'-এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল। এই বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদ বা সায়েন্টিফিক ম্যাটেরিয়ালিজম মানুষের ক্ষণস্থায়ী দৈহিক অস্তিত্বকেই সারাৎসার করে তুলেছে, সন্দেহ সৃষ্টি করেছে বেদ, উপনিষদ, ভগবদগীতার প্রতি।
এমনকি ভগবদ্বিশ্বাসী বিজ্ঞানীরাও অবজ্ঞাত যেমন আইনস্টাইন। বর্তমান সভ্যতা যে অন্ধ জড়বাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, তা মূলত এই জড়বাদী বিজ্ঞানের ফলশ্রুতি।।
‘সিইং ইজ বিলিভিং’ঃ যা পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের পরিধির মধ্যে নেই, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, তা নেই?
‘চোখে না দেখলে বিশ্বাস করিনা' – দৃঢ়পণ অনেকের। তাদের কাছে কেবল দেখা’-ই বিশ্বাস করার পূর্বশর্ত ( Seeing is believing ')। এইভাবে তারা আত্মা, পরমেশ্বর ভগবান -সকলকেই তাদের দেখার বৃত্তের মধ্যে প্রদর্শিত হওয়ার দাবী করে। কিন্তু প্রথম যে বাস্তব সত্য তারা বিস্মৃত হয়, তা হচ্ছে ইন্দ্রিয়ের পরিধি ছাড়িয়ে সত্যের পরিধি বিস্তৃত;জড় ইন্দ্রিয়ের গােচরীভূত হওয়ার জন্য সমগ্র সত্য বাধ্য নয়। জড় ইন্দ্রিয় কেবল স্থূল জড় বস্তুকে অনুভব (Feel ) করতে পারে:সূক্ষ্ম জড় বস্তু ও অ-জড় চিৎ বস্তু (চেতন বস্তু) জড় ইন্দ্রিয়ের অনুভবগম্য নয়;
চোখ-কান-নাক-জিভ-ত্বক দিয়ে সমগ্র সত্যকে অনুভবের পরিধির মধ্যে আনা যায় না। এমনকি সূক্ষ্ম জড় বস্তু (Subtle matter) বা শক্তিকেও আমরা ইন্দ্রিয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি না।
কিছু দৃষ্টান্ত :
১. রেডিও তরঙ্গ বা বেতার তরঙ্গ ও আফ্রিকার গভীর অরণ্যের উপজাতিদের বােঝান যাবে এর অস্তিত্ব?
২.সবকিছু কি দেখা যায় ?মনকেও ?
3.20 Htz -এর নীচে ও 20000 হার্টজ এর উপরের শব্দতরঙ্গ।
৪. চৌম্বক শক্তি ; গােটা পৃথিবীটাই বিরাট চুম্বক ; স্কুলের বই থেকে শেখার আগে কে অনুভব করেছে ?
৫. মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ছাদে ১০ কেজি বা ১০ টন জিনিস রেখে ঘরে বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করুন—টানের তীব্রতা মেপে ওজনের হিসাব দিতে।
৬. নিউট্রিনাে সূক্ষ্ম বস্তুকণা —পৃথিবীর এক প্রান্ত দিয়ে ফুড়ে অন্য প্রান্তে অনায়াসে বের হয়ে যেতে পারে। সেকেন্ডে কোটি কোটি নিউট্রিনাে প্রত্যেকের দেহ ভেদ করছে।
৭. অতিবেগুনী আট্রা ভায়ােলেট, অবলােহিত বা ইনফ্রারেড রশ্মি, এক্সরে। ইনফ্রারেড সূর্যের তাপ বয়ে আনে ;আমরা তাপ বুঝি, বুঝি না তাপের বাহক ইনফ্রারেডকে।।
৮. তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ (electroniagnetic force)। যা মাধ্যাকর্ষণের চেয়ে অনেকগুণ(10^৩9 গুণ) বেশি শক্তিশালী। সেলফোন কাজ করছে এই তরঙ্গে;অনুভব করা যায় ?
৯. মনঃ মন রয়েছে, সবাই জানে সে কথা—শব্দ কানের পর্দায় নয়, মনেই আঘাত করে,সূক্ষ্ম অনুভবগুলি মনেই অনুভূত হয়। কিন্তু মন কি কেউ জানে না; কেবল লক্ষণের দ্বারা এর অস্তিত্ব উপলব্ধ হয়। মন সূক্ষ্ম জড় বস্তু (Subte matter), কিন্তু ইন্দ্রিয়ের অনুভবগম্য নয়।
১০. অহংকার, মিথ্যা আমিত্ববােধ ::: এর প্রভাবে শরীর-কেন্দ্রিক পরিচিতিবােধে জড়িয়ে পড়তে হয়। শরীরগুলি বিভিন্ন আকৃতির মিথ্যা অহংকারের ফলে সেই বিভিন্ন বর্ণ, আকার-আকৃত্রি পােশাকে আত্মবুদ্ধি হয় আমি কালাে/সাদা/রাশিয়ান/নারী/পুরুষ/বৃদ্ধ। শাস্ত্রানুসারে, এই অহং বােধও সূক্ষ্ম জড়বস্তু ;তা রয়েছে, জড়বিজ্ঞানে এর কোন হদিশ নেই।।
উপরােক্ত ১০টি পদার্থের কোনটিকেই দেখা যায় না, তবুও সেগুলি রয়েছে। অতএব ‘সিইং ইজ বিলিভিং’ নীতি আকড়ে থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত, পাঠক ভেবে দেখুন।
অ্যাপােলাে-১৩র
বিপন্ন মহাকাশচারীদের জীবনরক্ষার জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করার আহ্বান নাসার বিজ্ঞানীদের ১৯৭০-এর এপ্রিলে যখনঅ্যাপােলো-১৩ তে একটি বিস্ফোরণে বিপন্ন ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মহাকাশচারীদের জীবন, তখন নাসার বিজ্ঞানীরা দুরদর্শনে বিশ্বের মানুষের কাছে আহ্বান জানান, ভগবানের কাছে তাঁদের জীবন রক্ষার জন্য প্রার্থনা জানাতে।
Comments
Post a Comment