ভ্রূণ থেকে শিশু ও শ্রীকৃষ্ণের বিস্ময়-প্রযুক্তি। Page-120
ভ্রূণ থেকে শিশু ও শ্রীকৃষ্ণের বিস্ময়-প্রযুক্তি।

বয়স্ক দের সামান্য হাঁটু খারাপ হলে সেটি বদলিয়ে প্লাস্টিকের অংশ লাগাতে খরচ পড়ে এক থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা। কিডনী ২ লক্ষ, হার্টের ভাল্ব ১-২ লক্ষ। অথচ, এগুলি যখন তরী হয়, তখন উপস্থিত থাকে না কোন এফ.আর.সি.এস সার্জেন, এমন কি শিশুর মস্তিষ্ক কার্যক্ষম হওয়ার আগেই তৈরী হয় দেহের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। শিশুর বাবা-মা তখনও জানেন না , শিশুটি পুত্র না কন্যা। সকলের অজান্তে গঠিত হয় তার অর্গানস।
কিছু তথ্য::
*ভ্রূণের জন্মের ৩ সপ্তাহের মধ্যে তৈরী হয় হৃৎপিন্ড তখন শিশুটি ১০-১২ সেমি। একটি মাত্র ভ্রূণ কোষ বিভাজিত হতে হতে তৈরী হয় দেহের লক্ষ লক্ষ ভিন্ন আকৃতির অঙ্গ। ৩ সপ্তাহ পর তা বায়াে-ইলেকট্রিসিটির সাহায্যে চলতে শুরু করে। ডপলার মেশিনে পালস রেট মেপে দেখা যায় ১৪০-১৫০ বার। প্রতি মিনিটে।।
*৪ সপ্তাহ পর শিশুটি ১৪ সেমি হয়, তৈরী হয় প্রথমে হাত, পরে পা। বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে হাত-পায়ের জয়েন্টগুলাে ভাঁজ অবস্থাতেই সঠিক ও নিখুঁতভাবে তৈরী হয়।।
**৯ সপ্তাহ পর স্নায়ুতন্ত্র বিকশিত হতে শুরু করে। প্রতি মিনিটে ২৫ লক্ষ নিউরােন তৈরী হতে থাকে। প্রতিটি নিউরােন জটিল গঠনের—বায়ােইলেকট্রিসিটির জটিল আবর্ত ক্রিয়ায় চলে। দেহের বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরণের লক্ষ লক্ষ স্নায়ু নিখুঁতভাবে তৈরী হয় প্রতি মিনিটে। তখনও মস্তিষ্কের সঙ্গে এই স্নায়ু -তৈরী প্রক্রিয়ার কোন সম্বন্ধ নেই।
*১২ সপ্তাহ পর হাত-পায়ের তলা ঠিক হয়। শুরু হয় বিভিন্ন জ্ঞানের বিকাশ।।
* ১৩ সপ্তাহ পর কান তৈরী হয়, যা সুনির্দিষ্ট ২০-২০০০ হার্জ পরিমাণ শব্দ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা।
*১৮ সপ্তাহ পর জটিল বর্ণময় আলােকগ্রাহী ক্যামেরা চোখ সম্পূর্ণ হয়, চোখে লাগানাে থাকে লক্ষ লক্ষ ফোটো-রিসেপ্টর সেল, যা নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলােক রশ্মি-সংবেদী(0.1-0.8 microns ওয়েভলেংথের)।
• শিশুর নিখুঁত মস্তিষ্ক তৈরীর সময় প্রতি মিনিটে লক্ষ লক্ষ নিখুঁত ডিজাইনের সাইন্যাপ্স তৈরী হতে থাকে।।
• ২৪ সপ্তাহ পর শিশু চেতনা লাভ করে। তার অচেতন অবস্থাতেই দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি তৈরী হয়ে যায়। এই সময় তার ইন্দ্রিয়গুলি সক্রিয় হয়।।
• সাধারণত ২৮০ দিন পর, দেহ তৈরী সম্পূর্ণ হলে কার সংগােপন নির্দেশে বিশেষ একটি হরমােন নিঃসৃত হয়, নির্দেশ দেয় প্রসবের। পূর্ণাঙ্গ শিশু ভূমিষ্ঠ হয়ে বাইরে আলাে দেখে। কত টাকা মূল্য হতে পারে এই সুন্দর বডি-মেশিনের?
টেষ্টটিউব বেবি ঃ মানবশরীর তৈরীর এই রকম ডিজাইনিং মানবীয় ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তার অতীত। টেষ্টটিউব বেবি-র ক্ষেত্রে পিতা-মাতার শুক্রানু-ডিম্বাণু নেওয়া হয়, টেষ্টটিউবে নিষিক্ত করে মাত্র কয়েকদিন পরই মাতৃগর্ভে রাখা হয় ভ্রূণকে । মাতগর্ভে ভ্রূণের বিকাশ হয় টেষ্টটিউবে কখনই তা হবে না।।
বিজ্ঞানী ডঃ বীরেন্দ্র বিজয় বিশ্বাস মলিকিউলার বায়ােলজিস্ট, কোলকাতার বসু বিজ্ঞান। মন্দিরের অধিকর্তা, দেশ-বিদেশের বহুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ভাটনগরও শ্রীনিবাসাইয়া পুরস্কার প্রাপ্ত ঃ
“কটুকু জানতে পেরেছি আমরা ? এই দেহটা সম্বন্ধেই কি বেশিকিছু জানতে পেরেছি ? এই সাদামাটা দেহটা সম্বন্ধে ? ভাবুন তাে, সামান্য একটা সেল, যাকে মাইক্রোস্কোপে দেখতে হয়, সেই অতি ক্ষুদ্র একটা সেল থেকে কী করে আপনার আমার এই এত বড়ো দেহটা তৈরী হল! হাত-পা চোখ কান নাক হৃৎপিন্ড ফুসফুস সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ-হল। চুল নখ দাঁত ইত্যাদি হল! কী করে হল?
কোষ তাে সেই একটাই! তার মধ্যে ডি.এন.এ আছে, ডি.এন.এর ছাঁচে তৈরী হচ্ছে আর.এন.এ, তারপর সেই আর.এন.এ, ডি.এন.এর কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে প্রোটিন তৈরী করছে এবং সেই প্রােটিনকে দিয়ে ইচ্ছামতাে জিনিস তৈরি করিয়ে নিচ্ছে।
হাত পা চোখ কান দাঁত নখ যা খুশি তা-ই-তৈরী করাচ্ছে। কিন্তু কী করে এতসব হচ্ছে? ডি.এন.এর মেসেজটা কীকরে সেলের মধ্যে কাজ করছে, এখনও আমরা জানি না। কী করে আর.এন.এ তৈরী হচ্ছে, প্রোটিন তৈরী হচ্ছে, কোষ বিভাজন হচ্ছে, একটা কোষ সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে কোটি কোটি কোষ হচ্ছে— এখনও আমরা জানতে পারিনি”।
—বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ঈশ্বর, শ্রীভূমি, পৃ-৯৯
Comments
Post a Comment