হরে কৃষ্ণ মন্ত্র ও ধ্যান এর ফলে সুফল বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, (PAGE-279)
হরে কৃষ্ণ মন্ত্র ও ধ্যান এর ফলে সুফল বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত,
(PAGE-279)
রিসার্চ-৩।
পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির মেধাবী স্নাতক ডেভিড উলফ তার ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে স্নাতকোত্তর MSW (Master of Social Work) কোর্সে ভর্তি হন। ভগবদগীতার একজন ঐকান্তিক পাঠক ডেভিড সেখানে একটি অসাধারণ কাজ করেন – তাঁর তৈরী পেপারে তিনি সরাসরি বৈদিক প্যারাডাইম অনুসারে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে প্রফেসরদের বিস্মিত করেন। “ওঃ ! অলয়েজ ইউ ব্রিং গ্রেট ডেপথ অব এক্সপিরিয়েন্স,” তাঁর এক প্রফেসরের মন্তব্য।
ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির ঐ কোর্সে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি রিসার্চ প্রােজেক্ট করতে হত। বৈদিক শাস্ত্রের প্রমাণ উপস্থাপন করে ডেভিড ষোলোটি শব্দ-সমন্বিত হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রকে রিসার্চের জন্য বেছে নেন। তিনি গবেষণায় দেখাতে চেয়েছিলেন বিভিন্ন রােগ সৃষ্টিকারী স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, ডিপ্রেশান বা হতাশা ও অজ্ঞানতা বা তম (Mode of Ignorance).থেকে বিমুক্তির জন্য অন্যান্য সমস্ত পদ্ধতির থেকে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কিভাবে শক্তিশালী।
এজন্য ডেভিড তিনটি টেস্ট-গ্রুপ বেছে নেন। তাঁর সঙ্গে আরাে দুজন গবেষণা সহায়তাকারী ছিলেন। নিউজপেপারে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাঁরা গবেষণার প্রার্থী বেছে নেন। ঠিক হল প্রতি গ্রুপে থাকবে ২৪ জন। প্রথম দল প্রতিদিন তিন রাউণ্ড (১ রাউণ্ড - ১০৮ বার) করে হরেকৃষ্ণ জপ করবে ক্রমাগত ২৮ দিন।
দ্বিতীয় দল অন্য কোন মন্ত্র জপ করবে, একই সময় ২৮ দিন এবং তৃতীয় দল পরিচালিত মানসিক চিকিৎসার পদ্ধতি অনুসারে স্বনিয়ন্ত্রণ প্রয়ােগ করবে ২৮ দিন।।
স্ট্যান্ডার্ড সাইকিক পদ্ধতিতে তিনটি গ্রুপের মানসিক অবস্থা নােট করা হল। এরপর কার্যক্রম শুরু হল। ২৮ দিন পূর্ণ হলে আবার তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যবেক্ষণ করা হল। দেখা গেল প্রথম গ্রুপের ২৪ জন পুরাে ২৮ দিনে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ সম্পূর্ণ করেছেন। তাদের মধ্যে মানসিক চাপ ও হতাশা লক্ষণীয় রকমের কমে গিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, ভগবদগীতায় প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য অনুসারে তাদের কথাবার্তা আচরণে সত্ত্বগুণের বিকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেই সাথে রজোগুণ অনেকটা প্রশমিত হচ্ছে বলে বােঝা যাচ্ছে। তমােগুণের প্রগাঢ় প্রভাবও হ্রাস পেয়েছে।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলের পাঁচ জন করে টেস্ট সম্পূর্ণ হবার আগেই ধৈর্য হারিয়ে বিদায় নিয়েছে। উভয় দলের ৩৮ জনের পরিসংখ্যানগত অগ্রগতির হার প্রথম দলের থেকে অনেকটা নীচে। যদিও গভীর মানসিক প্রশান্তি প্রভৃতি প্রথম দলে সুপরিস্ফুট নয় (অন্য দলে তার আভাসও ছিল না), তবু অগ্রগতির ধারায় এটা স্পষ্টভাবে বােঝা যাচ্ছিল যে জপের সংখ্যা, জপের সময়, ও স্থায়িত্বকাল প্রভৃতি ফ্যাক্টরগুলি বর্ধিত করলে আশানুরূপ ফলের দিকে অগ্রগতি নিশ্চিত।
ডেভিডের গবেষণা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডঃ অ্যাকবেল এই গবেষণায় খুবই খুশি হয়েছিলেন। “কোনাে পারমার্থিক সত্যকে এভাবে আধুনিক গবেষণার পন্থা মাধ্যমে টেস্ট করে দেখার যে চ্যালেঞ্জ তুমি গ্রহণ করেছ এবং তাকে বাস্তবে প্রয়ােগের ফলাফল নিরীক্ষণ করে তার কার্যকারিতা যাচাইয়ের যে দৃষ্টান্ত তুমি প্রদর্শন করেছ, তা সবার জন্য অনুসরণীয়”, তিনি মন্তব্য করেছিলেন। রিসার্চ শেষে প্রথম দলের দু'একজনের মন্তব্য:
শন স্টোকমার ঃ “সত্যিই আত্মস্থ হবার জন্য জপ অত্যন্ত কার্যকরী এক পন্থা। আমি আমার কর্মক্লান্ত দিনের শেষে জপ করতাম রিল্যাক্সড হবার জন্য। আমার মনে হয়, যদি আমি সকালে জপ করতাম তাহলে তা আমাকে আরো রেশি সাহায্য করত।”
ওয়েন্ডি জিলকোঙ্কি (ছাত্রী) ঃ “জপমালার ব্যাপারটি সম্বন্ধে ইতিপূর্বে আমার কোনো ধারণা ছিল না। আমি ওটা সম্বন্ধে কিছু বুঝতে পারতাম না। কিন্তু এই টেস্ট আমাকে তা উপলব্ধিতে সাহায্য করেছে। আমি একটি মালা নিয়ে গিয়ে আমার ভাইকেও জপ করা শিখিয়েছি।”
জেরেমি ডেলিগ্লেন ঃ “যদিও আমি কোনাে ধর্মীয় ব্যক্তি নই, তবু আমি যখন হরেকৃষ্ণ ভক্তদের রাস্তায় সংকীর্তন করতে ও ইউনির্ভাসিটি ক্যাম্পাসে প্রসাদ বিতরণ করতে দেখতাম, তখন তাতে আমি খুবই আকৃষ্ট হতাম। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের এই গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাটা আমার জন্য খুবই আকর্ষণীয় ছিল। এর মাধ্যমে হরেকৃষ্ণ ভক্তদের আনুশীলিত সংস্কৃতি ও আচার আচরণ সম্বন্ধে আমি গভীরতর উপলব্ধি লাভ করেছি।”
ডেভিড, দীক্ষিত নাম ধীরগােবিন্দ সাফল্যের সঙ্গে তার থিসিস উপস্থাপনা করেছিলেন। এবং ১৯৯৯-এর জুনে পি. এইচ. ডি ডিগ্রী লাভ করেছিলেন।
Subscribe For Latest Information
Comments
Post a Comment